📺 পর্ব – ২: টেলিভিশনের মূল ধারণা
৪. টেলিভিশনের বিভিন্ন ধরণ
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে টেলিভিশনের ধরণও পরিবর্তিত হয়েছে। নিচে সবচেয়ে প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ টিভি ধরণগুলো তুলে ধরা হলো:
Ø CRT(Cathode Ray Tube) TV: একসময়
এটি ছিল টেলিভিশনের সমার্থক। এর পেছনের বিশাল টিউবের কারণে এটি আকারে ভারী এবং অনেক জায়গা দখল করত। মূলত একটি ইলেকট্রন গান (Electron Gun) ব্যবহার করে টিউবের ফসফর স্ক্রিনে ছবি তৈরি হতো। এটি এখন প্রায় বিলুপ্ত, তবে এর মূল কার্যপ্রণালী বোঝা অনেক আধুনিক টিভির সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
Ø LED
(Light Emitting Diode) TV: এটি
মূলত LCD প্রযুক্তির একটি উন্নত সংস্করণ। LCD টিভির মতো ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্পের পরিবর্তে এতে LED বাতি ব্যবহার করা হয় ব্যাকলাইট হিসেবে। LED বাতির কারণে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা অনেক বেশি হয়, ছবির রং আরও স্পষ্ট দেখায় এবং বিদ্যুতের খরচও অনেক কমে যায়। বর্তমানে বাজারে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভির ধরণ, যা মধ্যবিত্তদের কাছেও সাশ্রয়ী।
Ø OLED
(Organic Light Emitting Diode) TV: OLED টিভি
সবচেয়ে আধুনিক ডিসপ্লে প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে প্রতিটি পিক্সেল নিজেই আলো তৈরি করে। এর ফলে এর "ব্ল্যাক লেভেল" (Black
Level) বা কালো রং অসাধারণ দেখায়, কারণ পিক্সেলগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এটি চমৎকার কন্ট্রাস্ট এবং রং সরবরাহ করে। যদিও এর দাম অনেক বেশি, মানের দিক থেকে এটি সেরা।
Ø Smart
TV: স্মার্ট টিভি কোনো নির্দিষ্ট ডিসপ্লে প্রযুক্তি নয়, বরং এটি টিভির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এটি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারে এবং এতে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন (যেমন: ইউটিউব, নেটফ্লিক্স) ব্যবহার করা যায়। সাধারণত, এতে অ্যান্ড্রয়েড ওএস (Android OS) বা অন্যান্য কোম্পানির নিজস্ব ওএস ব্যবহার করা হয়। স্মার্ট টিভি বর্তমান প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়, কারণ এটি বিনোদনের সকল মাধ্যমকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে।
৫. টেলিভিশনের প্রধান অংশগুলো
একটি টেলিভিশন অনেকগুলো জটিল অংশের সমন্বয়ে কাজ করে। সার্ভিসিং এর কাজ শুরু করার আগে এই অংশগুলোর কার্যকারিতা বোঝা জরুরি।
Ø পাওয়ার সাপ্লাই (Power Supply):
এটি টিভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পুরো সিস্টেমকে চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এর প্রধান কাজ হলো বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে প্রাপ্ত AC কারেন্টকে টিভির বিভিন্ন অংশের জন্য প্রয়োজনীয় DC কারেন্টে রূপান্তর করা। পাওয়ার সাপ্লাই নষ্ট হলে টিভি একেবারেই চালু হয় না। সার্ভিসিং-এর ক্ষেত্রে এটিই প্রথম অংশ যা সাধারণত পরীক্ষা করা হয়।
Ø ডিসপ্লে প্যানেল (Display
Panel): এটি টিভির মূল অংশ, যেখানে আমরা ছবি দেখি। ছবির মান, উজ্জ্বলতা এবং ভিউয়িং এক্সপেরিয়েন্স পুরোটাই এই প্যানেলের ওপর নির্ভরশীল। LCD, LED বা OLED প্যানেলের গঠন ও কার্যপ্রণালী আলাদা হলেও এদের মূল কাজ হলো ছবি দেখানো। ডিসপ্লে প্যানেল নষ্ট হলে তা মেরামত করা সাধারণত কঠিন এবং ব্যয়বহুল।
Ø ব্যাকলাইট সিস্টেম (Backlight
System): ডিসপ্লে
প্যানেল নিজে আলো তৈরি করে না (OLED ছাড়া)। তাই প্যানেলকে
আলোকিত করার জন্য ব্যাকলাইট সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। LCD টিভিতে CCFL এবং LED টিভিতে LED ব্যাকলাইট স্ট্রিপ ব্যবহার করা হয়। যদি ব্যাকলাইট সিস্টেমের কোনো ত্রুটি থাকে, তাহলে টিভির স্ক্রিন কালো বা খুবই অনুজ্জ্বল দেখায়, যদিও শব্দ শোনা যায়।
Ø মাদারবোর্ড
(Motherboard): মাদারবোর্ডকে
টিভির "মস্তিষ্ক" বলা হয়। এর মধ্যে প্রসেসর, মেমোরি, আইসি (IC) এবং অন্যান্য কন্ট্রোল সার্কিট থাকে। সিগন্যাল প্রসেসিং, ভিডিও-অডিও আউটপুট, ইউজার কমান্ড গ্রহণ এবং সকল কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এই মাদারবোর্ড। মাদারবোর্ডে সমস্যা হলে টিভি চালু হতে দেরি হয়, ছবি বা শব্দ আসে না, অথবা কোনো কমান্ড কাজ করে না।
Ø টিউনার ও স্পিকার (Tuner &
Speaker): টিউনার
অ্যান্টেনা বা ক্যাবল সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং তাকে ভিডিও ও অডিও সিগন্যালে রূপান্তর করে। এই সিগন্যাল মাদারবোর্ডের মাধ্যমে ডিসপ্লে এবং স্পিকারে পাঠানো হয়। স্পিকার অডিও আউটপুট দেয়, যাতে টিভি শুধু দেখা নয়, শোনাও যায়। যদি টিউনারে সমস্যা হয়, তবে চ্যানেলে ছবি আসবে না।
সারসংক্ষেপ
টেলিভিশন সার্ভিসিং-এর জগতে প্রবেশ করতে হলে টিভির ধরণ এবং এর মূল অংশগুলো সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। CRT থেকে শুরু করে OLED পর্যন্ত প্রতিটি প্রযুক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বোঝা জরুরি। আবার পাওয়ার সাপ্লাই থেকে শুরু করে মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে প্যানেল, ব্যাকলাইট এবং টিউনার—প্রত্যেকটি অংশ একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কোনো একটি অংশ সঠিকভাবে কাজ না করলে পুরো টিভি সিস্টেম অচল হয়ে যেতে পারে। তাই যারা এই পেশায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাদের এই মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা অপরিহার্য।
এই বিষয়গুলো নিয়ে কি আপনার কোনো প্রশ্ন আছে? অথবা আপনি কি টিভির কোনো নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চান?
পর্ব – ১ পর্ব – ৩ পর্ব – ৪ পর্ব – ৫ পর্ব – ৬ পর্ব – ৭


কোন মন্তব্য নেই